Synchronous ICT Book

ন্যানো টেকনোলজিতে (Nanotechnology)

ন্যানো টেকনোলজিতে (Nanotechnology):

            ন্যানো হচ্ছে দৈর্ঘ্য পরিমাপের একটি একক। ন্যানো শব্দের অর্থ হচ্ছে ক্ষুদ্র আর টেকনোলজি অর্থ হচ্ছে প্রযুক্তি, ন্যানোমিটার স্কেলে যেসব প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে তাকে ন্যানোপ্রযুক্তি বা ন্যানো টেকনোলজি বলা হয়ে থাকে।  ১৯৫৯ সালে আমেরিকান বিখ্যাত পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) সর্বপ্রথম  তার “There’s Plenty of Room at the Bottom ” এ ন্যানো টেকনোলজির ধারণা বর্ণনা করেছিলেন। যেখানে তিনি পরমাণুর প্রত্যক্ষ ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে সংশ্লেষণের সম্ভাবনা বর্ণনা করেছিলেন। এজন্য রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) কে ন্যানো প্রযুক্তির জনক বলা হয়। ন্যানো টেকনোলজিতে দুটি প্রধান পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।

১. “bottom-up” পদ্ধতিতে, বিভিন্ন উপকরণ এবং ডিভাইসগুলো

আণবিক উপাদানগুলো থেকে তৈরি করা হয় যা আণবিক নীতির দ্বারা

রাসায়নিকভাবে নিজেদেরকে একত্রিত করে । অর্থাৎ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারের

জিনিস দিয়ে বড় আকারের জিনিস তৈরি করা হয় ।

২. “top-down” পদ্ধতিতে ন্যানো নিয়ন্ত্রণ স্তরের পারমানবিক অবজেক্ট গুলো

ছাড়াই বৃহত্তর বস্তু থেকে নির্মিত হয়। এ পদ্ধতিতে কোন জিনিসকে কেটে

ছোট ছোট করে তাকে নির্দিষ্ট আকার দেয়া হয়। আমাদের বর্তমান

ইলেক্ট্রনিক্স হল, “top-down” প্রযুক্তি। আর ন্যানোটেকনোলজির হল “bottom-up” প্রযুক্তি ।

ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগক্ষেত্রসমূহঃ

১। কম্পিউটার হার্ডওয়্যার তৈরিতেঃ কম্পিউটারের  সাথে ন্যানো টেকনোলজি সম্পর্কিত। কম্পিউটার এর ভিতর যে প্রসেসর আছে, তা অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ন্যানোমিটার স্কেলের সার্কিট। আর তাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ন্যানো টেকনোলজি। বেশি পরিমান ডেটা সংরক্ষণের ক্ষমতা সম্পন্ন মেমোরি,অধিকতর গতি ও দক্ষতা সম্পন্ন প্রসেসর তৈরিতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার হয়।

২। ন্যানো রোবট তৈরিতেঃ  প্রযুক্তির কল্যাণে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে অতি ক্ষুদ্র রোবট তৈরি করা হয়েছে ও আরো গবেষণা চলছে , ক্ষুদ্র রোবট এর সাহয্যে মানবদেহের অভ্যন্তরের অস্ত্রপাচার সম্ভব হচ্ছে।

৩। ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি তৈরিতেঃ ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহাররে ফলে ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি আকারে ছোট, ওজনে হালকা, কার্যক্ষমতা বেশি এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হচ্ছে। যেমন- ন্যানোট্রানজিস্টার, ন্যানোডায়োড।

৪। জ্বালানি তৈরিতেঃ কম খরচে জ্বালানি তৈরি,  এবং বিভিন্ন প্রকার ব্যাটারির জন্য ফুয়েল সেল তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে করে ডিভাইস গুলো অধিকতর ক্ষুদ্রতর ও কার্যকর করা সম্ভব হয়েছে।

৫। শিল্প-কারখানায়ঃ ন্যানোটেকনোলোজি ব্যবহারের ফলে শিল্প-কারখানায় উৎপাদিত উপাদান গুলো শক্ত, দৃহ, স্থায়ী ও হালকা হয়ে থাকে।

প্যাকেজিং ও প্রলেপঃ বিভিন্ন খাদ্যজাত পণ্যের প্যাকেজিং এর সিলভারের প্রলেপ তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে করে খাদ্য ব্যক্টেরিয়ার আক্রমণ থেকে মুক্ত থাকে ও খাবারের স্বাদ ঠিক থাকে।

ঔষধ তৈরিতেঃ স্মার্ট ড্রাগ তৈরিতে ঔষধ শিল্পে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে রোগাক্রান্ত কোষে সরাসরি ড্রাগ প্রয়োগ করা যায়।

রাসায়নিক শিল্পেঃ পানি বিশুদ্ধকরণ ও সানস্ক্রিনে ব্যবহৃত টাইটানিয়াম ডাই-অক্সাইড তৈরির কাজে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

খেলাধুলার সামগ্রী তৈরিতেঃ খেলাধুলার সামগ্রি যেমন- টেনিস বলের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি, বাতাসে গলফ বলের দিক ঠিক রাখার জন্য, র‍্যাকেটের শক্তি ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে।

১০। বস্ত্র শিল্পেঃ বস্ত্র শিল্পে কাপড়ের ওজন, ঘনত্ব, কালারের ঘনত্ব ইত্যাদি  সঠিক রাখার জন্য ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে।

১১। কৃত্তিম অঙ্গ-পতঙ্গ তৈরিতেঃ ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে বিভিন্ন কৃত্তিম অঙ্গ-পতঙ্গ তৈরি সম্ভব, যেগুলো অনুভূতি সম্পন্ন হয়ে থাকে।

১২। ক্যান্সার নিরাময়েঃ ন্যানোপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষে সরাসরি ওষুধ প্রয়োগে কোষ সমূহ ধ্বংস করা যায়।

১৩। বাতাস পরিশোধনঃ ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষতিকারক গ্যাস সমূহকে অক্ষতিকারক গ্যাসে রূপান্তর করে বাতাস পরিশোধন করা যায়।

১৪মহাকাশ অভিযানঃ মহাকাশ অভিযানে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্র, নভোযানকে হালকা করে তৈরি করতে ও জ্বালানির ব্যবহার কমাতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়।

ন্যানো টেকনোলজির সুবিধাসমূহ: 

১। মজবুত ও টেকসই, আকারে তুলনামূলক ছোট এবং ওজনে হালকা যন্ত্র তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার অতুলনীয়।

২। এই প্রযুক্তির ফলে উৎপাদিত ঔষধ “স্মার্ট ড্রাগ” ব্যবহার করে দ্রুত রুগী দ্রুত সুস্থতা লাভ করে।

৩। খাদ্যজাত পণ্যের প্যাকেজিং এর সিলভার তৈরির কাজে।

৪। পানি ও বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া যাচ্ছে ন্যানো টেকনোলজির সুফলে।

৫। ন্যানো টেকনোলজি দিয়ে তৈরি ন্যানো ট্রান্সজিস্টর, ন্যানো ডায়োড, প্লাজমা ডিসপ্লে ইত্যাদি ব্যবহারের ফলে ইলেকট্রনিক শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হচ্ছে।

৬। এই প্রযুক্তির তৈরি ব্যাটারি, ফুয়েল সেল, সোলার সেল ইত্যাদির মাধ্যমে সৌরশক্তিকে অধিকতর কাজে লাগানো যায়।

৭। ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগের ফলে উৎপাদিত ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র সমূহ ওজনে হালকা বহনযোগ্য ও  বিদ্যুৎ সাশ্রয়ীহয়ে থাকে।

ন্যানো টেকনোলজির অসুবিধাসমূহঃ 

১। বিভিন্ন শিল্প-কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার হওয়ার কারণে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২। মারাত্নক যুদ্ধাস্ত্র তৈরি হচ্ছে ফলে সহজেই যুদ্ধ সংঘঠিত হওয়ার সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে।

২। ন্যানো টেকনোলজি ব্যয়বহুল। ফলে এই প্রযুক্তির গবেষণা ও  প্রয়োগে ব্যয়বহুল।

৩। ন্যানোপার্টিকেল মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে মস্তিষ্ক ও ফুসফুসের মারাত্নক ক্ষতি করে থাকে।

Loading

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart